Job Preparation : শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা প্রস্তুতি
শিক্ষকতা একটি মহান পেশা।এ পেশার সাথে তুলনা চলে আর কোনো পেশা নেই।শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে কাজ করেন।যারা এই মহান পেশায় নিজেকে নিয়জিত করতে চান তাদের জন্য শিক্ষক-নিবন্ধন পরীক্ষা বাধ্যতামূলক।বেসরকারি স্কুল কলেজের শিক্ষক হতে হলে বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি নিবন্ধন পরীক্ষার সনদ থাকা লাগে।নিবন্ধন পরীক্ষা না দিলে আপনি বেসরকারি স্কুল কলেজের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করতে পারবেন না।
পড়াশোনা শেষে কিংবা শেষের পর্যায়ে থাকা প্রায় শিক্ষার্থীই চাকরির জন্য অল্প অল্প করে প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। বিভিন্ন চাকরির জন্য বিভিন্নভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে হয়।যারা বেসরকারি বিভিন্ন স্কুল-কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করতে চান তাদের শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা দিতে হয়।
আবেদনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতা কমপক্ষে স্নাতক পাশ হতে হবে। স্কুল কলেজের নিবন্ধন পরীক্ষার সিলেবাস এ কিছুটা পার্থক্য রয়েছে।তবে বাংলা,ইংরেজি, গনিত,সাধারণ জ্ঞান এর প্রিলিমিনারি এর প্রস্তুতি প্রায় একই রকম।
শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা:
প্রি-লিমিনারি,লিখিত এবং ভাইবা এ তিন ধাপে হয়ে থাকে।প্রিলিমিনারি তে ১০০ নম্বরের পরীক্ষা নেয়া হয়।এখনে পাস নম্বর তুলতে পারলে আপনাকে লিখিত পরীক্ষার জন্য সুযোগ দেয়া হবে।লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর ভাইভার জন্য ডাকা হবে। ভাইভায় পাসের পর মেধাক্রম অনুসারে নিয়োগ দেয়া হবে।
আজ প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করা হবে।প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় মূলত বাংলা,গণিত,ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান থেকে প্রশ্ন আসে। মোট ১০০ নম্বরের নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন থাকে।প্রতিটি প্রশ্নের জন্য ১ নম্বর বরাদ্দ। তবে এখানে নেগেটিভ মার্কিং রয়েছে।প্রতিটি ভুলের জন্য ০.৫ করে কাটা হয়। তাই আন্দাজে উত্তর দেয়া পরিহার করতে হবে।
বিভিন্ন বিষয়ের প্রস্তুতি কিভাবে নিবেন?
সকল বিষয়ের জন্য আলাদা আলাদা ভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে এবং সেভাবে রুটিন ঠিক করতে হবে।কোন বিষয়গুলো পড়বেন এবং কোথা থেকে পড়বেন তা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা জানা থাকা জরুরি।
বাংলা: বাংলার জন্য আপনাকে দুইভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।ব্যাকরণ অংশ ও সাহিত্যে অংশ।
ব্যাকরণ :বাংলায় ভালো করার জন্য আপনাকে ব্যাকরণ অংশে বেশি জোর দিতে হবে।সেক্ষেত্রে কার্যকরী হবে নবম-দশম শ্রেণীর ব্যাকরণ বই। ব্যাকরণ অংশের ভাষা,বর্ণ,শব্দ, সন্ধি,কারক,বিভক্ত, উপসর্গ,অনুসর্গ, সমাস,পারিভাষিক শব্দ,বিপরীত শব্দ,সমার্থক শব্দ,বাগধারা,এককথায় প্রকাশ,বানান শুদ্ধিকরণ, বাক্য সংকোচন,লিঙ্গ পরিবর্তন ইত্যাদি থেকে প্রশ্ন আসে বেশি।তাই সবগুলো ভালো করে পড়তে হবে।বইয়ে থাকা উদাহরণগুলো ভালো করে পড়তে হবে।
সাহিত্য :নবম-দশম শ্রেণীর বাংলা বইয়ে থাকা গল্প /উপন্যাস /কবিতা এর রচয়িতা, লেখক পরিচিতি, ছাদ্মনাম, কবিতার লাইন উল্লেখ করে কবি/কবিতার নাম বিভিন্ন ভাবে প্রশ্ন আসতে পারে। মোট কথা লেখকপরিচিতি অংশ টি ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে।
ইংরেজি:ইংরেজিতে অনেক দূর্বলতা রয়েছে আমাদের। তবে, ভালোভাবে প্রস্তুতি নিলে ইংরেজিতে অনেক ভালো নাম্বার তোলা যায়। সেক্ষেত্রে, সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে ইংরেজি ব্যাকরণ এর দিকে। ব্যাকরণ এর বেসিক বিষয় গুলোতে পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে। ব্যাকরণ যেসব অংশ থেকে প্রশ্ন আসে সেগুলো হলো: parts of speech, preposition, Right from verb, Tense, voice, vocabulary, synonym, antonym, phrase and idioms, Narration, spelling, Fill in the blanks, sentence correction, completing Sentence. এই টপিক গুলো খুব ভালো করে উদাহরণ সহ অনুশীলন করতে হবে। ইংরেজি থেকে বাংলা এবং বাংলা থেকে ইংরেজি অনুবাদ করা শিখতে হবে।
গণিত :গণিতে সহজে নাম্বার তোলো যায়। তবে এর জন্য পরিকল্পিত ভাবে প্রস্তুতি নেয়া আবশ্যক। নিয়মিত অল্প অল্প করে প্রস্তুতি নিলে গণিতের সমস্যাগুলো সমাধান হয়ে যাবে। অষ্টম ও নবম শ্রেণির বই এ থাকা সকল গাণিতিক বিষয়গুলোর উপর পরিষ্কার ধারণা রাখলে গনিত নিয়ে আটকানোর সম্ভাবনা থাকবে না আশা করি। পরিমাপ,সুদকষা,লাভ-ক্ষতি,ভগ্নাংশ, অনুপাত-সমানুপাত, শতকরা ,ঐকিক নিয়ম, বীজগাণিতিক রাশিমালা এবং জ্যামিতিক অংশের জন্য রেখা,ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, কোণ,বৃত্ত সম্পর্কে ধারণা ও জ্যামিতির সাধারণ সূত্র গুলো ভালো করে অনুশীলন করতে হবে।
সাধারণ জ্ঞান: বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি এবং সাম্প্রতিক বিশ্ব এই বিষয়গুলো থেকে প্রশ্ন করা হয়। বাংলাদেশ বিষয়াবলি থেকে বাংলাদেশের ইতিহাস,ভাষা,মুক্তিযুদ্ধ, আন্দোলন,সভ্যতা -সংস্কৃতি, ভূ-প্রকৃতি, আবহাওয়া -জলবায়ু,নদনদী, অর্থনীতি, রাজনীতি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, দিবস ইত্যাদি থেকে প্রশ্ন আসে।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি তে আসে বিভিন্ন দেশের ইতিহাস,সভ্যতা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, মুদ্রা,রাজধানী, পুরষ্কার, খেলাধুলা, ইত্যাদি থেকে। সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা থেকেও নানা ধরনের প্রশ্ন আসে। সেজন্য এ অংশে ভালো ধারনা রাখার জন্য মাসিক কারেন্ট এফেয়ার্স নিয়মিত অনুসরণ করা উচিত। বিজ্ঞান-কম্পিউটার – তথ্য প্রযুক্তি থেকে নানা বেসিক প্রশ্ন আসে।বিগত সালে আসা প্রশ্নগুলো পড়লে ধারণা পাওয়া যাবে।
সর্বপরি নিজের মতো করে রুটিন সাজিয়ে পড়তে হবে। প্রতিদিন অনুশীলন করতে হবে।বিশেষ করে গাণিতিক বিষয়গুলো ভালোভাবে আয়ত্ত আনাতে হলে চর্চা ব্যতীত অন্য কোনো পন্থা নেই। এভাবে পড়লে শুধু নিবন্ধন পরীক্ষা নয়, যেকোনো সরকারি চাকরির প্রি-লিমিনারি তে আপনি ভালো করতে পারবেন।