কেন পড়বো ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং ?
EEE
ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, সংক্ষেপে যা আমাদের কাছে EEE নামে পরিচিত। প্রচলিত ইঞ্জিয়ারিং বিষয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো হচ্ছে EEE বা বাংলায় যাকে তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশল বলা হয়। ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং এর জন্ম হয়েছে মূলত ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। এই ইইই কে “Soul of Engineering” বা “প্রকৌশলবিদ্যার আত্মা” বলা হয়ে থাকে। যে সকল বিষয়ের ব্যাপক চাহিদা অতীতেও সব সময় ছিল, বর্তমানেও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে তার মধ্যে EEE অন্যতম।
গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম থেকে শুরু করে বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদন পর্যন্ত তড়িৎ প্রকৌশলীরা প্রযুক্তির একটি বিশাল স্থান জুড়ে জায়গা দখল করে আছে। এই সেক্টরে ইলেকট্রিসিটির পাওয়ার হাউস ডিজাইন ও তার রক্ষণবেক্ষণ, ইলেকট্রনিক্স সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়, টেলিকমিউনিকেশন, সার্কিট ডিজাইন এন্ড অ্যাপলিকেশন ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা এবং ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশের নকশা প্রণয়ন, আবিষ্কার বা উদ্ভাবন, নিরীক্ষণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা সহ টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার নকশা প্রণয়ন থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের কার্যক্রম, ঘরবাড়ির আলো ও বিদ্যুৎ বন্টন ব্যবস্থা, গৃহকর্মে ব্যবহার্য যন্ত্রের নকশা প্রণয়ন অথবা শিল্পকারখানার যন্ত্রপাতির বৈদ্যুতিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা সহ আরও বিভিন্ন দিক নিয়ে একজন তড়িৎ প্রকৌশলী কাজ করে থাকেন।
ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে যারা পড়ার স্বপ্ন দেখে তাদের মধ্যে অনেকেই চাই EEE নিয়ে পড়তে। শুধু যে দেশেই এই বিষয়টির চাহিদা আছে তা কিন্ত না, বরং বাইরের দেশগুলোতেও একজন তড়িৎ প্রকৌশলীর ব্যাপক চাহিদা আছে। এই বিষয়কে যেহেতু ৪টি ভাগে ভাগ করা যাচ্ছে তাই ইচ্ছামতো যেকোনো একটা ভাগ নিয়েও পরবর্তীতে দেখা যাচ্ছে ক্যারিয়ার গড়া যায়। এটি অবশ্য সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ইচ্ছা যে কে কোন বিষয় নিয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চায়। তবে যে বিষয়ই বাছাই করুক না কেন সামনে এই বিষয়টির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। যদি স্কুল আর কলেজ জীবনে পছন্দের বিষয় থাকে স্থির তড়িৎ, চল তড়িৎ, চুম্বক বা বর্তনী তাহলে EEE হতে পারে সেরা একটি সাবজেক্ট। সেই সাথে যদি গণিতের সমীকরণ আর কমপ্লেক্স নাম্বার নিয়ে আগ্রহ থাকে তাহলে তো আর কথায় নেই, EEE তে পড়ে ক্যারিয়ার গড়ার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
পুরো ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়টি ৪টি ভাগের উপর নির্ভর করছে। পাওয়ার, ইলেক্ট্রনিকস, টেলিকমিউনিকেশন, কম্পিউটার এই চারটি ভাগ নিয়েই মূলত পুরো বিষয়টি। তবে প্রত্যেকটিরই আলাদা আলাদা কোর্স থাকে। এখান থেকে চাইলে যে কেউ সবগুলো বিষয়ের উপর কোর্স করে নিতে পারবে আবার কেউ চাইলে কোনো বিষয় স্কিপ করেও যেতে পারবে।
পাওয়ার সেক্টরে চাহিদা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই মুহুর্তে প্রচুর। বর্তমানে সরকার বেশ কিছু পাওয়ার প্ল্যান্ট নিয়ে কাজ করছে, সেইসাথে ভবিষ্যতে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের পরিকল্পনাও চলছে। এই সেক্টরের দায়িত্বই থাকে একজন পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারের হাতে। সুতরাং বর্তমান সময়ে এই বিভাগে ক্যারিয়ার গড়ার দারুণ একটা সুযোগ রয়েছে। আর ইলেক্ট্রনিক্স নিয়ে আমাদের মোটামুটি ধারণা আছে বলা যায়। বর্তমানে স্মার্টফোন, আইফোন, আইপ্যাড, নোটপ্যাড, ল্যাপটপসহ সব ধরনের ডিভাইসই ইলেক্ট্রনিক্সের অবদান। এই সব ডিভাইসই ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট দিয়ে ডিজাইন করতে হয়। তবে এই বিভাগে পড়তে গেলে অবশ্যই ক্রিয়েটিভ হতে হবে। উদ্ভাবনী ক্ষমতায় দক্ষতা থাকতে হবে, নতুন নতুন ডিজাইন নিয়ে কাজ করতে হবে আর অবশ্যই প্যাশন দিয়ে কাজ করতে পারলেই এই বিভাগে সফলতা নিশ্চিত।
বর্তমানে আমাদের দেশে এক উল্লেখযোগ্য হারে তড়িৎ প্রকৌশলীরা কাজ করছে দেশে নতুন নতুন নেটওয়ার্ক, টাওয়ার, কভারেজ তৈরিসহ সমগ্র টেলিকমিউনিকেশন নিয়ে। উন্নত এবং আধুনিক সব যোগাযোগ প্রযুক্তিতে এখন প্রচুর তড়িৎ প্রকৌশলী
দেখা যায়। আর কম্পিউটার বিভাগটি ধরতে গেলে সব বিষয়ের সাথেই যুক্ত। এই বিভাগ নিয়ে পড়তে গেলে সফটওয়্যার, প্রোগামিং এগুলো নিয়ে ভালো ধারণা থাকতে হবে। ইইই তে কম্পিউটার নিয়ে পড়ে পরবর্তীতে সিএসই তেও অনেকে চলে যায়। সমস্যা সমাধানের দক্ষতা আর সৃজনশীলতাই এই বিভাগে টিকে থাকার অন্যতম চাবিকাঠি।
বাংলাদেশে বুয়েট, কুয়েট, চুয়েট, রুয়েট, ব্র্যাক, ইস্ট ওয়েস্ট, নর্থ সাউথ, AIUB , AUST, UIU, IUB সহ অধিকাংশ পাবলিক এবং প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে আপনি ইইই নিয়ে পড়াশোনা করতে পারবেন। আর বাইরে যদি ইইই এর উপর উচ্চশিক্ষার জন্য পড়তে যান তাহলে তো ম্যাসাচুসেটস আর হাভার্ড আছেই। তাছাড়া সকল খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়েই আপনি ইইই নিয়ে পড়ার সুযোগ পাবেন।
ইইই তে পড়ে বেশ ভালো করেই সরকারী বিভিন্ন বিভাগ-বিদ্যুৎ উন্নয়ন অধিদপ্তর, আবহাওয়া অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার, পল্লীবিদ্যুতায়ন বোর্ড, জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর, গণপূর্ত বিভাগ, দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ও পল্লী উন্নয়ন অধিদপ্তর প্রভৃতিতে প্রকৌশলী হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ থাকছে। তাছাড়া
রিয়েল এস্টেট কোম্পানি, বিভিন্ন ডেভলপার কোম্পানি, কনসালটেন্টসি ফার্ম, এনজিও এমনকি বিভিন্ন গবেষণা ইন্সটিটিউটেও আপনি কাজের সুযোগ পাচ্ছেন। Grameenphone, Banglalink, Robi, Airtel, Teletalk, Citycell প্রভৃতি মোবাইল কোম্পানিতে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবেও নিজের ক্যারিয়ার গড়তে পারছেন। আর Apple, NASA, Microsoft, Intel, Nokia, Samsung, Sony, HP, Dell inc এর মত টেক জায়ান্ট কোম্পানি তো আছেই, সেগুলোতেই একজন তড়িৎ প্রকৌশলী হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ থাকছে।